সোনালী অতীত নিয়ে লেখা ২টি সুন্দর গল্প | Old is Gold Bangla Story

সোনালী অতীত নিয়ে লেখা ২টি সুন্দর গল্প


গল্পের নাম: সোনালী অতীত ১

শুক্রবার আসলেই প্রায় সবার ব্যস্ততা একটা বিষয় নিয়ে। গ্রাম গঞ্জের সবাই ৩.০০ টার আগে কাজ শেষ করতেন। কারণ ৩.০০ টায় ছায়াছবি শুরু হবে। 

কেউ সোফায়, টুলে বা পিরায়, কেউ চেয়ারে, কেউ ফ্লোরে সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে বেস সিনেমা দেখতাম। এলাকায় যাদের বাসায় টিভি থাকতো তাদের বাসায় সবার আড্ডা চলতো। প্রতিবেশীরা সবাই আসবে, একসাথে টিভি দেখা হবে। কতোই না মজা! আবার শুক্রবার রাত ৮:৩০ বেজে উঠার আগেই পুরো গ্রামের সবার খাওয়া শেষ করতো। উত্তেজনা, ভয় আর আনন্দের মিশ্রণে আলিফ লায়লার অপেক্ষা। বিজ্ঞাপন হচ্ছে কেয়া কসমেটিক, তিব্বত স্নো, নারিকেল তেল ও বিভিন্ন বিস্কিটের। আলিফ লায়লা শুরু হবার খবর নাই। ধৈর্য্য ধরতে ধরতে প্রায় ক্লান্ত হওয়ার পর শোনা যেতো সেই প্রিয় মিউজিক। এরপর শুরু হয় সবার প্রিয় অনুষ্ঠান "আলিফ লায়লা"। কাহিনীতে মনযোগ দিতে দিতেই আগামী পর্বে দেখবেন। এত অল্প সময় দেখায়, তবু আনন্দের শেষ থাকেনা।

এখনও সব আছে, আগের থেকে ভালো টিভি, ডিস নেটওয়ার্ক, কিন্তু আগের মতো আর আকর্ষণ নেই। সেই উপস্থাপিকা ও আছেন, তিনি এখনও আমন্ত্রণ জানান, কিন্তু সেই আমন্ত্রণ কাউকে আগের মতো মনযোগী করে না। ছবি দেখার জন্য এখন কেউ শুক্রবারের অপেক্ষা করে না। এখনকার ছোটরা হয়তো আলিফ লায়লার নামও জানেনা। সবাই মোবাইল, ডিজিটাল কার্টুন, গেম নিয়ে ব্যস্ত। বর্তমানে একসাথে ৩০/৪০ জন মিলে টিভি দেখার কল্পনাও করা যায় না। 

শুক্রবার আসে, শুক্রবার চলে যায়, সপ্তাহ ঘুরে আবার শুক্রবার আসে, কিন্তু শৈশব আমাদের হারিয়ে গেছে সব বদলে গেছে!
 
 
গল্পের নাম: সোনালী অতীত ২

ছোট্ট গ্রামটির নাম ছিল শান্তিপুর। চারদিকে সবুজ ধানক্ষেত, মাঝখানে কাঁচা রাস্তা আর একপাশে খাল বয়ে গেছে- যেন প্রকৃতির এক অনন্য আঁচড়। সেই গ্রামেই বাস করতেন একজন বয়স্ক মানুষ, নাম তার নুরুল হক মিয়া। গ্রামের সবাই তাকে "নুরুল চাচা" বলে ডাকত।

নুরুল চাচা একসময় শহরের কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। শহরের চাকচিক্য ছেড়ে বয়সের শেষ প্রান্তে ফিরে এসেছেন তার শেকড়ের কাছে। প্রতিদিন বিকেলে উঠোনে বসে থাকতেন একটা পুরনো হাতপাখা হাতে, আর গ্রামের ছেলেমেয়েরা গোল হয়ে বসত তার চারপাশে। সবাই অপেক্ষায় থাকত, চাচা আজ কী গল্প শুনাবেন?

একদিন চাচা বললেন, তোমরা জানো, এই শান্তিপুর একসময় কতো প্রাণবন্ত ছিল? সন্ধ্যা নামলেই মাঠে নামত ছেলেদের হা-ডু-ডু, মেয়েরা খেলত কাবাডি। ঈদের সময় সবাই এক হয়ে নাটক করতাম, গান গাইতাম। কারও মুখে অভাবের অভিযোগ ছিল না, কারণ ভালোবাসা ছিল সবার মধ্যে।

ছেলেমেয়েরা বিস্ময়ে চেয়ে থাকে, যেন কল্পনার রাজ্যে ভেসে বেড়ায়। চাচার চোখ দুটোও ভিজে ওঠে পুরনো দিনের স্মৃতিতে।

আজ সেই হাসি, সেই মিলেমিশে থাকা হারিয়ে গেছে। মোবাইল আর ব্যস্ততায় আমরা মানুষ ভুলে গেছি মানুষকে, চাচা বলেন এক দমে।

একটু থেমে তিনি যোগ করেন, তবে তোমরা যদি চাও, সেই সোনালী অতীত আবার ফিরিয়ে আনতে পারো, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর একতার মধ্যে দিয়ে।

চুপচাপ বসে থাকা ছেলেমেয়েরা যেন এক নতুন অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়। তারা ভাবে, কেন নয়? ছোট ছোট ভালোবাসা দিয়েই তো গড়া যায় একটি সোনালী ভবিষ্যৎ- যার শেকড় হয় সোনালী অতীতে।
Next Post Previous Post
5 Comments
  • Anonymous
    Anonymous May 6, 2024 at 1:01 PM

    এই অতিত আমার গর্ব

  • Anonymous
    Anonymous May 11, 2024 at 12:10 PM

    কতই না মজা ছিলো

    • Anonymous
      Anonymous January 21, 2025 at 12:24 PM

      Hum

  • Anonymous
    Anonymous May 13, 2024 at 4:03 PM

    mone poere sei ager din gulo

  • Anonymous
    Anonymous May 17, 2024 at 11:48 AM

    আহ এখনো মনে পরে সেই দিন গুলোর কথা

Add Comment
comment url

You Mey No